Skip to main content

পাওলো কোয়েলহো বলেছেন “People never learn anything by being told, they have to find out for themselves”
দুটো ঘটনার উত্তর খুঁজতে খুঁজতে যখন আরো দুটি ঘটনার সামনে দাঁড়াতে হলো তখন উত্তর পেয়ে গেলাম। ঘটনাগুলো সামান্যই বলতে গেলে। তবু নিজের জীবনে কাকতালীয়ভাবে চার সময়ের চারটি দৃশ্যপট নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে যখন দুটো উত্তরে ইতি টানে তখন মনে হলো জগতের ক্যালকুলেশন বেশ সহজ সরল। আরো মনে হলো, আমাদের চারপাশের প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমের সাপেক্ষে নিজের অবস্থান জানাটা খুব জরুরি। তাহলেই অনেকক্ষেত্রে নিজের সাথে ঘটা অনেক অসংলগ্নতা ভাষাময় হয়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে কোনমতে নিজের মান সম্মান নিয়ে ফিরে আসলেও আসা যায়।
২০১৯ সালের কথা। জেনেভার এক রৌদ্রজ্জ্বল সকালে মেট্রো স্টেশনে এসে বুঝতে পারছিলাম না কোন দিকের ট্রেন ধরে সার্নের ল্যাবের দিকে যাবো। চারদিকে ব্যস্ততম শহর। হাতে সিটি ম্যাপ থাকলেও কূল-কিনারা করতে পারছিলাম না। কাছেই এক ভদ্র লোক দাঁড়িয়ে ছিল, তাকে ম্যাপ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাব যে কিভাবে আমি সার্নের ল্যাবে যেতে পারি। আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই, কুকুরকে মানুষ যেমন দূর দূর করতে থাকে তার কিছুটা ভদ্রোচিত সংস্করণে আমাকে এড়িয়ে গেলেন। চকিত মনে হলো ইমাদুল হক মিলনের পরাধীন বইয়ের কথা। মনে হলো ভদ্রলোক আমাকে হয়তো সাহায্য প্রার্থী ভেবেছেন।

নিজের পোশাকের দিকে তাকালাম। নাহ! বেশ পরিপাটি ছিমছাম। কাঁধে চমৎকার কামেরার ব্যাগ। হাতে হোটেল প্রদত্ত সিটি ম্যাপ। ফকিন্নি ভাবার কারণ তো দেখছি না।

কিন্তু কেন তিনি এমন করলেন?
ভেবেছিলাম অনেকবার।
উত্তর পাইনি। কিন্তু লোকটির আচরণে তাঁর প্রতি বেশ রাগ, ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।

ইতোমধ্যে কেটে গিয়েছে প্রায় ৬ বছর। এখন রাজশাহী শহরে থাকি চাকরির সুবাদে। পদ্মাপাড়ের শহর রক্ষা বাঁধের পাশ ঘেঁষা রাস্তা আমার নিত্য দৌড় অনুশীলনের ট্র্যাক। একদিন সকালে দৌড়াচ্ছিলাম। নির্জন রাস্তায় একটা ছেলে এগিয়ে এলো। ১৭/১৮ বছর হবে হয়তো। কিছু বলার চেষ্টা করলো মনে হলো।

আমি বেশ একটা প্যাচ ঘুরে ছেলেটাকে স্রেফ এড়িয়ে গেলাম।
দৌড়ের গতিতে তেমন কোন পরিবর্তন হলো না।
অবলীলায় এগিয়ে যেতে থাকলাম।

চকিত ৬ বছর আগের জেনেভার রৌদ্রজ্জ্বল সকালের সেই ভদ্র লোকের ছায়া আমার মধ্যে দেখতে পেলাম। বহুদিনের নিখোঁজ উত্তর দেখা দিল। সহসায় মনের গভীরে ডুব দিয়ে দেখলাম সেখানে অসংখ্য অসংলগ্নতা গিজগিজ করছে। ভেবেই নিয়েছিলাম, ছেলেটা একটা সাহায্যপ্রার্থী হতে পারে কিংবা হতে পারে ধান্দাবাজ! How absurd thoughts are without judgment!

দীর্ঘদিনের চাকরিকালে নিজের বিষয়ে একটা আত্মতৃপ্তি grow করছিল। নিজেও self-satisfaction এ ছিলাম। expectation বাড়তে থাকায় বিপত্তি বাঁধলো। বড় ফোরামে নিজের কাজের স্বীকৃতির স্বরূপ কেমন জানতে মন চাইলো। দেখলাম সেখানে সিন্ধু সম কাজ করেও বিন্দুতেও নেই আমি। ফুল ক্রেডিট তো দুরের কথা, সামান্য সহায়ক হিসাবেও স্বীকৃতি নেই। সান্ত্বনা পেতাম রাজমিস্ত্রির কথা ভেবে। কিন্তু বড় বড় দালান-কোঠাতে তো কন্সট্রাকসন ফার্মের নাম-ধাম থাকে। খুব মন চাইতো সিনিয়রদের মনে আসলে আমার কাজের স্বীকৃতির অবয়বটা কেমন তা জানতে। অজানাই ছিল অনেক দিন। অবশেষে মোক্ষম একটা সময়ে জানতে পারলাম যদিও সেই অনুভূতিটা সুখকর ছিল না।


আমার এক এক্স কলিগ একদিন জানালো, আপনার কাছে নোটিং, চিঠির ড্রাফট তো শিখেছিলাম। তখনতো তেমন কিছুই পারতাম না। এখন পলিসি,আইন বানাতে হচ্ছে। তার চোখে মুখে আত্মতৃপ্তির ছায়া। কেন জানি কোন প্রশ্রয় ভিতর থেকে আসলো না। নিজের অজান্তেই মনের ভিতরে খুবই আপত্তিকর কথোপকথন টের পেলাম- ক্লারিক্যাল কাজ করে বলে কিনা পলিসি আইন বানাচ্ছে। পেলাম আমার বকেয়া উত্তর, আর বুঝলাম—সিস্টেম যে ‘Superiority’ আমাদের মাঝে ক্যান্সারের মতো বপন করে দিচ্ছে, তার মুক্তি আগে দরকার; নচেৎ অধীনস্থদের ক্রেডিট বেহাত হয়ে যাবে।


shisir mehdi

মো: মেহেদী হাসান। জন্ম করতোয়া ‍পাড়ের পুন্ড্রবর্ধনের স্মৃতিমাখা বগুড়ায়। সরকারী আজিজুল হক কলেজ হতে রসায়নে স্নাতকোত্তর। খন্ডকালীন এমফিল করছেন রুয়েটে। বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরির মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। বর্তমানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত। শিশির মেহ্দী ছদ্মনামে লেখালেখির শুরু করেছিলেন। প্রকাশিত বই চক্র ( ছোট গল্প) এবং নির্বাসনে আছি (কবিতা)। পানি নিয়ে একটা গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। লেখালেখি, ভ্রমণ ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

Leave a Reply