Skip to main content

নেকগুলো ঘন্টার, দিনের এবং মাসের চিন্তা, আলোচনা এবং পরিকল্পনায় আমাদের গ্রুপের জন্য একটা Advanced level হাইকিং প্ল্যান করা হলো। ইনানি সি বিচ হতে হেঁটে টেকনাফ। সবার কাছেই রোমাঞ্চকর মনে হলো, আপ্রুভ  হলো। কাউন্ট ডাউন হলো শুভ দিনের। ১৬ জন সদস্যের এ সমস্যা ও সমস্যার মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে গেল ১৩ জন। ট্যুরের একটা বাহারি নামও দেয়া হলো, ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’। সমুদ্র পাশ দিয়ে যেতে যেতে সাগরের বিশালতাকে Explore করবো, সাথে নিজেদেরও। ইনানি- টেকনাফ পথে সাগরের সাথে আমাদের সঙ্গী হবে পাহাড়, ঝাউবন, যাত্রায় প্রতীক্ষায় থাকা  রঙ বেরঙের ট্রলার, সমুদ্রের সাথে মিশে থাকা মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎ! এমনটাই ভাবা হয়েছিল। বলা হয়েছিল বিচের মুক্ত বাতাসে ঘুড়ি উড়িয়ে স্বাধীনতার স্বাদ নিবো, সৈকতের ভেজা বালিতে ফুটবল খেলায় ক্লান্তি মেটাবো সাগর জলে স্নানে।

রিপোর্টিং সময় বৃহস্পতিবার শেষ বিকাল।

সন্ধ্যায় পেবল স্টোন রিসোর্টে যার-যার তার-তার মুডে সহযাত্রীদের প্রথম আবিষ্কার করি। যেন কোন এক অদৃশ্য কারণে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপে সব ভাগ হয়ে গিয়েছে।

যাই হোক, রাত ৯.০০ টার সমন্বিত বারবিকিউ ডিনার ঠেলাঠেলি, ডাকাডাকি আর খোঁজাখুঁজিতে বিলম্বিত হতে শুরু হলো। এরপর সৈকতের বালি উড়িয়ে ঝড় এলো। সাগরের সে কী গর্জন! আমরা সংখ্যা লঘু গ্রুপ কান পেতে শুনতে লাগলাম। তারপর আকাশ কাঁপিয়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো। বাধ্য হয়েই রিসোর্টের ঘরে ফিরলাম। বৃষ্টি একটু থিতিয়ে আসলে সাগর ঘেঁষা খোলা ডাইনিং স্পেসে আমরা বসলাম কয়েকজন। তারপর একে একে সবাই আসতে শুরু করলো। শুনতে পেলাম, অনেকেই এ গরমে পূর্বপরিকল্পিত হাইকিংএ আগ্রহী নয়। কেউ কেউ বললো, যতক্ষণ ভালো লাগবে ততক্ষণ হাঁটবে, তার বেশি নয়; কেউ বললো, ঘুমটা খুব দরকার, কাল এতো সকালে উঠে হাঁটা শুরু করা ইম্পসিবল ব্যাপার মনে হচ্ছে; কেউ বললো, আচ্ছা দেখিই না কাল শুরু করে, হাঁটতে না পারলে আর না, বাকি পথ গাড়িতে যাব। প্রত্যেক প্রস্তাবই মোক্ষম, জ্ঞানগর্ভ এবং বাস্তবসম্মত মনে হলো শুধু গত দুই মাসে সবার মতামত নিয়ে যে পরিকল্পনা দাঁড় করানো হয়েছিল তাকেই অবাস্তব মনে হতে লাগলো।

ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি জোর জবরদস্তির মধ্য দিয়ে সকাল ছয়টার যাত্রা সাতটাই শুরু করতে হলো। ততক্ষণে বিচ বেশ তেতে উঠেছে। গ্রুপে পিছিয়ে পড়া, হাঁটার গতি এক না থাকা, কারো কারো আগে চলে যাওয়া, কারো পিছিয়ে পড়া, কেউ বলেই বসছে আর হাঁটা সম্ভব নয়, এতো কষ্ট করার কোন মানে আছে? অবশেষে দলগত কার্যে অবসন্নতা এসে গেলো।

নাস্তা আসার প্রতীক্ষায় সৈকত ঘেঁষা সুপুরি পাতার ছাউনির নিচে অবলীলায়  এক/দেড় ঘন্টা অলস সময় পার করে দিলাম। তারপর আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট গাড়িতে চমৎকার নাস্তা আসলো। সমুদ্র হতে ভেসে আসা বাতাস, জলের আছড়ে পড়ার শব্দ, সৈকতে প্রবালের গায়ে জলের খেলা আর সুস্বাদু নাস্তা বেশ ভালোই লাগলো। বিচে মানুষ নেই বললেই চলে, রোদ বেশ উঠেছে। দিগন্ত পর্যন্ত চোখ যায় অনায়াসে। দিগন্ত হতে ছুটে আসা জল সবুজ, সাদা/ ঘোলাটে আর নীল রংয়ে চোখে ধরা দেয়। কোরাল বিছানো সৈকত দেখে মনে হলো অসংখ্য প্রাণী সান বাথে মশগুল, অনেকগুলো আবার জলে গা এলিয়ে আছে!

সাগরের জলে স্থানীয় একদল দুরন্ত বালক বালিকা। কে যেন পাশ হতে বললো, বাপ মা এদের পাঠিয়েছে এই বলে, “যা গোসল দিয়ে আয়, ভাত বাড়ছি”। কথাটা হঠাৎ মায়ের সাথে কাটানো অনেকগুলো দুপুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। কি দু:সাহস এদের! এক টুকরো কক সীটকে সার্ফবোর্ডের মত করে ছোট ছোট ঢেউয়ে গা ভাসানোর চেষ্টা করছে। শুকনো বালির রাজ্যে কাঁকড়া গর্তে লুকাতে ব্যস্ত। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি কি কারুকার্যময় বিন্যাসে আমাদের পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, জাস্ট অনতিদূরে দলবেধে বিচরণ করছে, কিছু একটা খুঁটিয়ে খাচ্ছে, আবার উড়ে যাচ্ছে।

এ সময় মাছ ধরা নিষেধ। ট্রলারগুলো বিচের উপর ঝাউবনের পাশে অলস অবস্থায় পরে আছে। কেউ কেউ মাছ ধরছে জাল দিয়ে, কেউ কেউ আমাদের টুপি চশমা পরে আসতে দেখে জাল ফেলে ভোঁ-দৌড় দিচ্ছে। কেউ কেউ জাল লুকিয়ে ভালো মানুষের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা না দেখার ভান করে এগিয়ে গেলাম। শুধু কক সীট আর বাঁশ দিয়ে তৈরি ট্রলার দেখে অবাক হলাম।

ইতোমধ্যে আমাদের গ্রুপ হতে ছোট ছোট দলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ বসে পড়লো, কেউ গাড়িতে উঠলো, কেউ দুপুরের খাবার আয়োজনের হোটেল খুঁজতে চলে গেল, কেউ আবার হাঁটার উপর থাকলো। অবশেষে মাইক্রোবাসে দুই গ্রুপে আমাদের আজকের ডেস্টিনেশন নাফ নদীর পাড়ে অবস্থিত বন বিভাগের গেস্ট হাউজে পৌঁছালাম। অগ্রগামী দল তখন দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুমে আচ্ছন্ন। আমরাও ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম, ভাত, ভর্তা, ডাল আর কালাচান্দা মাছের কারিতে বিকাল বেলায় লাঞ্চটা চমৎকার ছিল। কেউ বললো প্রচণ্ড ক্ষুধা তাই এমন অমৃত; কেউ বলল নাহ, আসলেই মেন্যুটা বেশ। খেতে খেতে ডাইনিং হতে নাফ নদী আর তার পাশের ধ্যানমগ্ন পাহাড় দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনে হলো জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম জায়গায় বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছি। এর আগে সাজেকের রক প্যারাডাইসে ডাইনিং এ বসে নীল পাহাড় শ্রেণী দেখে এমনি মুগ্ধ হয়েছিলাম। অসংখ্য বারের মতো এরূপ ভালো লাগায় মনে হলো, এখানে আবার আসতে হবে অন্তত ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে নিয়ে! জানি, হয়ে ওঠে না আর। আর যদিও আসা বা যাওয়া হয় সেখানে যে একই ফ্যান্টাসি পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তাই বা কে দিবে। পাঠকের মৃত্যু গল্পের মতো মুগ্ধ দর্শকের যে মৃত্যু হবে না এমন  নিঃসংশয় কিভাবে হতে পারি। এইতো ২০২২ সালের পেবল স্টোনে থাকার যে সুখকর স্মৃতি ছিল, ২০২৫ সালের এ ট্যুরে এসে একই রিসোর্টে থাকাকালে তা আর খুঁজে পাইনি। ২০২২ সালে “আবার আসিব” মনে করে ফিরে গিয়েছিলাম। আর এ বার ‘আর আসবো না এখানে’ নিয়ত করেই বের হয়েছি।

খাবার খেয়ে উঠতেই জানতে পারলাম, সাবরাং যাবে সবাই। রেডি হয়ে নিচে আসতে আসতেই দেখলাম প্রথম গ্রুপ যাত্রা শুরু করেছে। তারপর এক গ্রুপ জেটির দিকের চলে গেলো অটোরিক্সাতে। সাবরাং হতে গাড়ি ফেরার পর আমরা দুই/তিনজন রওনা দিলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সাবলাং পৌঁছে আঁধারে কোন কিছুই দেখতে পেলাম না। টং দোকানে বসে আমাদের গ্রামের দোকানের চেয়ে আলাদা কোন বিশেষত্ব চোখে পড়লো না। শ্রেফ ডাব খেয়ে ফিরতি পথে রওনা হলো এ দলটা। বলেই বসলাম, এ অন্ধকারে আমাদের আসার কারণটা তো জানলাম না। সবাই চুপ। কেউ কেউ বললো, জানতো না গেস্ট হাউজ হতে এখানে আসতে এতো সময় লাগবে।

গেস্ট হাউজে যখন ফিরলাম, তখন রাত ৯.০০ টা। দশটায় ডিনার সার্ভ করা হবে। বিছানা টানছে প্রবলভাবে। ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে উঠছি। ডিনার শেষে বারান্দায় বসে নাফ নদীর বাতাসে কিছু সময় কাটানোর ইচ্ছে থাকলেও ঘুমে জড়িয়ে যাচ্ছে চোখ।

আমারা চারজন এক রুমে। প্রচণ্ড গরম আজ। রুমের এসি ঠিকভাবে কাজ করছে না। কিছুক্ষণ পরপর বিকট শব্দ করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আবার ঠিক ৯ সেকেন্ড পর চালু হচ্ছে।৷ মধ্য রাতে ভ্যাপসা গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম এসি বন্ধ, জানালাগুলো খোলা। এসি বিস্ফোরণের ভয়ে কেউ হয়তো বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপর আবার ঘুমিয়ে গেলাম। যখন জাগলাম তখন ফজরের ওয়াক্ত।

নামাজ শেষে আমরা তিনজন আপাতত নাফের পাড় ধরে ১০ কি:মি: হাটার নিয়তে বের হলাম। গেস্ট হাউজের উত্তর পাশ ধরে শুরু হলো সকালের হাইকিং। পাহাড় কেটে বানানো বেশ উচু রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাফের জল ঘেঁষা মিয়ানমারের পাহাড় শ্রেণী দেখে থ হয়ে গেলাম। মেঘাচ্ছন্ন গুমোট আকাশের নিচে নীল চাদরে মোড়ানো ধ্যানমগ্ন যেন। নদীর শান্ত জলে বিষণ্ণ আকাশের মলিন প্রতিচ্ছবি। ল্যান্ডস্কেপটাতেই সম্মোহিত হয়ে গেলাম। পশ্চিম পাশে পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে পিচঢালা পথ, এপথ হতে ঢাল নেমে গিয়েছে নদীতে, তার ওপারে পাহাড় শ্রেণী। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ বৃষ্টি নামলো,  একফোঁটা.. দুফোঁটা…. ঝুম বৃষ্টি। ছাতা নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

ঢালু রাস্তা ধরে নিচে নেমে আসলাম। একপাশে পাহাড়ি বন, তার মাঝে বসতি, আবার কোথাও কোথাও বাড়ী ঘর নেই। অন্য পাশে নদীর তীরে বসতি কিংবা ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ। কোথাও কোথাও খাল যা ব্রিজের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভের মধ্যে দিয়ে নদীতে গিয়ে মিশেছে।  এমন একটা ব্রিজে দাঁড়িয়ে খালের দিকে তাকিয়ে একই সঙ্গে বিস্ময় আর কষ্টের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। একটা ছোট নৌকা খালের মধ্যে, নারী শিশু নামছে খুব সন্তর্পণে, সামনের গাইড পথ বাতলে দিচ্ছে, সবাই খুবই সতর্ক। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ! পত্রিকায় পড়েছি অনেকবার। মনে হলে, আহারে কী নিদারুন ক্লান্তি আর কষ্টময় এ যাত্রা, কত দেন-দরবার, দালালের দরকষাকষি, নির্যাতন,ভয়, অনিশ্চয়তা মিশানো এ পারাপার!

না দেখার ভান করে সামনে এগিয়ে গেলাম। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে, আমরা লোকালয়, থানা, আনছার ক্যাম্প ছেড়ে সামনে এগুচ্ছি। ছাতায় কুলিয়ে উঠতে পারছি না। সাথে ঝোড়ো বাতাস। বাধ্য হয়েই পথের পাশে জঙ্গলে বনরক্ষীদের জন্য নির্ধারিত ছাউনিতে আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি নামছে অবিরাম। মনে হলো এমন রিল্যাক্সড মুডে বহুদিন বর্ষণ দেখিনি। ইউরোপে বৃষ্টির দিনে তাদের নির্জন অরণ্যে তাকিয়ে যেমন মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, আজ এ বৃষ্টিস্নাত দিনে আমাদের বনের দিকে তাকিয়ে তার চেয়ে বেশি সম্মোহিত, তার চেয়ে বেশি পুলকিত আর মোহিত হলাম।

নাহ! বৃষ্টি ছাড়ার নাম নেই। সময় বয়ে যাচ্ছে। ঐ দিকে নাস্তা সার্ভ করা হবে। আবার শুনেছি, কয়েকটা স্পটে গ্রুপের যাওয়ার প্ল্যানও আছে। এ অবস্থায় হাইকিং করে  সময় কাভার করা সম্ভব নয়, আবার নির্জন রাস্তায় নিরাপত্তার বিষয়ও আছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ফিরতি পথ ধরলাম। সাথে বিরামহীন বৃষ্টি। সামনে পাহাড়। পাদদেশে কবরস্থান।  বৃষ্টির বেগ বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ের বিপরীতে মসজিদের গেটে আশ্রয় নিতে হলো। ঝুম বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে কবরগুলো। আহারে আমাদের শেষ আশ্রয়। মনে হলো, এ ছোট্ট জীবনে কি অনেক কিছুর খুব দরকার? জীবনের সব ক্যালকুলেশন মুহূর্তেই এক্সট্রিম মিনিম্যালিস্টের হিসাবের খাতা হয়ে ওঠলো।

বৃষ্টির বেগ কমে গেল। আবার ফিরতি পথ ধরলাম। দূরে আর মিয়ানমারের পাহাড় দেখা যায় না। সাদা আবরণে ঢাকা চারিদিক। একটা গেস্ট হাউজ হতে ডিমের অমলেটের গন্ধ ভেসে আসছে। ক্ষুধাটা বেশ টের পেলাম। গেস্ট হাউজে ফিরলাম। বারান্দা হতে একজন হাক দিল। নাস্তা রেডি হচ্ছে……….।

পরোটা, ডাল…. আর ডিমের অমলেট….. চমৎকার লাগলো।

টেকনাফ মডেল থানায় তুমুল বৃষ্টির মধ্যেই আসলাম। মাথিনের কূপ দেখার জন্য। কূপের পাশে ধিরাজ ভট্টাচার্যের আবক্ষ । তার লেখা যখন পুলিশ ছিলাম অবলম্বনে কিছু লাইন উদ্ধৃত করা আছে একটা বোর্ডে। পড়ে মনে হলো ধীরাজ ভট্টাচার্য নয় এখানে মাথিন নামক ভদ্র মহিলার আবক্ষ থাকা উচিত ছিল। বৃষ্টির মধ্যে শাহপরী দ্বীপের জেটি, দক্ষিণ পাড়ায় (আবহাওয়া ভালো থাকলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ দেখা যায়) সবাই মিলে একটা চক্কর দিয়ে ফেললাম। যেন পরীক্ষার শেষ মূহুর্তে অনেকগুলো প্রশ্ন কাভার করছি। পথে লাঞ্চ সেরে গেস্ট হাউজে হয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তখন দুপুর দুটো। মেরিন ড্রাইভ নয়, এবার যাচ্ছি টেকনাফ- কক্সবাজার হাইওয়ে ধরে। পথে কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প পড়বে। এ জার্নিটা বেশ ভালোই ছিল। পাহাড়কে পশ্চিমে রেখে লবণ ঘেরের পাশ দিয়ে ফিরতি যাত্রা। পথে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বাজারে থামলাম। যা মনে হলো, এখানে সবচেয়ে কমদামে বিক্রি হচ্ছে বই। আর বেশি দামে ত্রিপল আর হার্ডওয়ার পণ্য। মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে এডুকেশনাল টয়। কক্সবাজার এসে কিছু কেনাকাটার জন্য মাত্র ১০ মিনিট সময় পাওয়া গেল। তাড়াহুড়ো করে স্টেশনে আসলাম। ৭.৪৫ এ ট্রেন। ট্রেনে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার দিকে। অবাক হয়ে ভাবলাম পুরো ট্যুর জুড়ে কমরেডগণ একজায়গায় আপোষহীন, ছন্দময় ছিলেন। তাহলো কেনাকাটা। এই ভ্রমণের  একটা প্রতিকী নাম থাকলেও তা কতোটা অর্থবহ হয়েছে আমি জানি না। তবে সত্যিই, আল্লাহ চাইলে এ পথে আবার আসার ইচ্ছে আছে। আপাতত বিদায় কক্সবাজার।

shisir mehdi

মো: মেহেদী হাসান। জন্ম করতোয়া ‍পাড়ের পুন্ড্রবর্ধনের স্মৃতিমাখা বগুড়ায়। সরকারী আজিজুল হক কলেজ হতে রসায়নে স্নাতকোত্তর। খন্ডকালীন এমফিল করছেন রুয়েটে। বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরির মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। বর্তমানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত। শিশির মেহ্দী ছদ্মনামে লেখালেখির শুরু করেছিলেন। প্রকাশিত বই চক্র ( ছোট গল্প) এবং নির্বাসনে আছি (কবিতা)। পানি নিয়ে একটা গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। লেখালেখি, ভ্রমণ ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

One Comment

  • Forkan Ahsan says:

    এই লেখাটি শুধু একটি ভ্রমণের বর্ণনা নয়, একেকটা বাক্য যেন অনুভব, অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির পুঞ্জীভূত চিত্র। লেখার মধ্যে যে আবেগ, প্রকৃতির রূপ আর মানুষের ভেতরের টানাপোড়েন উঠে এসেছে, তা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। লেখাটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন আমি এই ট্যুরটি করছি। হাঁটছি ইনানি থেকে টেকনাফ, ঝাউবন ও নাফের পাড় ধরে। লেখাটিকে জীবন্ত করে তোলার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply