Skip to main content
সাত সকালে

দুটি গাণিতিক সমস্যা

By September 24, 2024No Comments

আজ সাত সকালে যখন মর্নিং ওয়ার্ক করছিলাম হঠাৎ অনেক দিন অমীমাংসিত থাকার পর সলভ হওয়া দুটি গাণিতিক সমস্যার কথা মনে হলো। প্রথম অংকটা আমার জীবনে দেখা আর দ্বিতীয়টা অতি পরিচিত এক প্রতিবেশীর।

পয়লা নম্বর অংক: 

সঠিক মনে নেই তখন আমার বয়স কত। সম্ভবত টাকার নোট চিনতে পারি। যোগ বিয়োগে হাতে খড়ি তেমন একটা হয়নি। তবে কোন টাকার কয়টা নোট আমার আছে তা বলতে পারতাম।

আব্বার সাথে সাইকেলে চেপে এক নিকট আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে কি হয়েছিল, কি খেয়েছিলাম খুব একটা মনে নেই, তবে যেটা মনে আছে, আমার সে দাদী আমার নাম করে সবুজ রংয়ের টাকার একটা নোট আব্বার হাতে দিয়েছিলেন। তাতে পাট ধোয়ার দৃশ্য, পরে  জেনেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে ঐটাই ছিল আমার জীবনে উপহার হিসাবে পাওয়া প্রথম টাকা । ফিরতে পথে বড় হাট পড়ে, তখন বিকাল বেলা। আব্বা আমাকে একটা মিষ্টির দোকানে নিয়ে গেলেন। কিছূটা কপার কালারের চামুচ দিয়ে সাদা রসগোল্লা কেটে খাওয়ার দৃশ্য যেন এখনো আমার চোখে ভাসে।  আব্বা কিছু খাননি। কিন্তু আমার খাওয়া যে তিনি গভীর মমতায়, স্নেহে অবলোকন করছিলেন তা ঐ দিন বাসায় গিয়ে শুনেছিলাম আর উপলব্ধি করেছিলাম বহু বছর পর। বাসায় ফিরে আব্বা মাকে বলছিলেন, আমি কিভাবে চামুচ দিয়ে নিজে আস্ত একটা রসগোল্লা খুবই পরিপাটি আর যত্ন করে কেটে কেটে খেয়েছি।

সেদিন আব্বা কাউন্টারে ঐ সবুজ বিশ টাকার নোট দিয়ে ৫ টাকার বিল দিয়েছিলেন।  আমাকে দুইটা দশ টাকার নোট আর একটা পাঁচ টাকার নোট ফেরত দিয়ে সাইকেলে চড়িয়ে বাসায় এনেছিলেন।

তারপর প্রাইমারি স্কুলে যখন গণনা শিখি, তখন হিসাব করে দেখলাম বিশ টাকা আব্বা কাউন্টারে দিয়ে আমাকে পঁচিশ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন।  ২০ বিয়োগ ৫ পঁচিশ হয় কেমন করে। হাইস্কুলে গিয়েও অংকটা মিলাতে পারিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়েও অংকটা অমীমাংসিত ছিল আমার কাছে।

অনার্সে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন মনে হলো এই গাণিতিক সমস্যার সাথে জীবন না মিশিয়েই হিসাব কষেছি এতদিন। মনে হলো বাবারা নেয় না। দেয়। দেয়ার মধ্যে, ত্যাগের মধ্যে অপরিমেয় আনন্দ খুজে নেয়। ২০ বিয়োগ ৫ কখনো পঁচিশ কখনো শত কখনো হাজার কোটি হয়ে যায়। বাবার স্নেহ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ শত কোটির অদেখা  ভুর্তুকিতে রুপান্তরিত হয়ে লন্ডভন্ড করে দেয় গণিতের শত শত নিয়ম।

দোসরা নম্বর অংক:

অফিসে বজলুল মিয়ার ব্যাপক নাম-ডাক আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে আধিপত্য। বস, বসদের বসের সাথে তার ওঠাবসা। সৎ, অসৎ, ভালো মন্দ সব সিনিয়রের সুনজরে তিনি সর্বদাই থাকেন। তার দিকে কেউ অঙ্গুলি উঠায় না। তার অনেকগুলো ক্যারিশম্যাটিক কোয়ালিটি আছে। যার মধ্যে অন্যতম তিনি যে কোন জিনিস আনবিলিভেবল ডিসকাউন্টে কাউকে কাউকে ক্রয় করিয়ে দেন। জুতো হতে শুরু করে টিভি ফ্রিজ, লিপস্টিক পর্যন্ত। গর্বের সাথে বলতে হয় ভদ্রলোক আমার খুবই পরিচিত একজন প্রতিবেশী। আমি ডাকি বজলুল ভাই বলে।

একদিন এক ইলেকট্রনিকস শো রুমে বজলুল ভাইয়ের এক এক্স বসকে বেশ উচ্চ স্বরে কথা বলতে দেখলাম। সেলসম্যান যতই তাকে বোঝায় যে, তার অনারে তারা সর্বোচ্চ ৫ % ডিস্ককাউন্ট দিতে পারবে, ততোই তিনি তেতে উঠছেন। তাহলে আগের বারে তিনি ৩০% কিভাবে পেয়েছেন। তিনি বারংবার বজলুল মিয়াকে ফোন দিচ্ছেন। ফোন আর রিসিভ হচ্ছে না। তিনি অন্য একটা নম্বরে ফোন দিয়ে বজলুল মিয়ার খোঁজ নিলেন এবং তাকে দ্রুত খুঁজে বের করে তাঁর সাথে যোগাযোগ করার কথা হুকুমের স্বরে বললেন। যতটুকু খেয়াল করতে পেরেছিলাম,  আমি শো রুমে থাকা কালে উনি বজলুল ভাইয়ের খোঁজ পাননি।

ফিরতি পথে আমারও তখন চিন্তা কিভাবে ৫% ডিসকাউন্ট কিভাবে ৩০% হয়ে যায়। আমার পরিচিত দুই একটা শো রুমে কথা বলে দেখেছি, কোন ভাবে নেগোসিয়েশন বা সৌজন্যতা দেখিয়ে ৩০% ডিসকাউন্ট সম্ভব কিনা। ঘুঘুর মত মাথা ঘুরিয়ে প্রতিবারই ভদ্রলোকগণ চোখ কপালে তুলে বলেছে, এত লাভ এ ব্যবসায়? তাহলে তো চার পাঁচটা দালাল উঠতো ভাই।

অগত্যা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বজলুল ভাইকে বললাম, সেদিনে তার এক্স বসের ঘটনা। পাশাপাশি বললাম, সত্যি করে বলুন দেখি, কি করে ৩০% ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা করেছিলেন ভাই। আপনার এই কারিশমার রহস্যটা কি ? আমিতো হিসাব মিলাতে পারিনা।

তিনি বললেন, ভাইরে! টাকার মামলায় জাদু টাদু কিচ্ছু নাই। বসের জন্য ৩০%।  ৫% শো রুম হতে নিয়েছি নিজের প্রভাব খাটিয়ে। ২৫% পকেট হতে।

২৫% পকেট হতে? আমি চোখ কপালে তুললাম।

বজলুল ভাই নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন, ঐটা ঐ পকেট থেকে না। সিস্টেমের পকেট থেকে দিয়েছি। সবাই খুশি থাকলে তা পূর্ণ হতে কতক্ষণ।

shisir mehdi

মো: মেহেদী হাসান। জন্ম করতোয়া ‍পাড়ের পুন্ড্রবর্ধনের স্মৃতিমাখা বগুড়ায়। সরকারী আজিজুল হক কলেজ হতে রসায়নে স্নাতকোত্তর। খন্ডকালীন এমফিল করছেন রুয়েটে। বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরির মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। বর্তমানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত। শিশির মেহ্দী ছদ্মনামে লেখালেখির শুরু করেছিলেন। প্রকাশিত বই চক্র ( ছোট গল্প) এবং নির্বাসনে আছি (কবিতা)। পানি নিয়ে একটা গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। লেখালেখি, ভ্রমণ ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

Leave a Reply