Skip to main content


          জ্ঞানীরা বলেন, আমজনতাও জানেন, অভ্যাস ভয়াবহ জিনিস। একবার ভিতরে কামড় বসাতে পারলেই কেল্লাফতে। হয় যাবে সব, না হয় আসবে। আসা-যাওয়ার বিষয় আশয় আবার গা লেগে মারামারিতে ব্যস্ত। যাওয়া আসাকে মানতে চায় না। আবার আসাও যাওয়াকে ছেড়ে কথা বলতে চায় না। সে যাক।


দীর্ঘ দিনের ফ্রি খাওয়ার অভ্যাস। সরি, বাক্যটিতে সম্ভবত প্রিভিলেইজ শব্দটা আনলে ভালো, আরো ভালো হয় প্রটোকল ব্যবহার করলে। হয়তো সেন্সগুলোর মধ্যে আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা বা পার্থক্য থাকতে পারে, যা আমার জানা নেই। আইনের মোড়কে সব কিছুই কি পূত পবিত্র? আপাত দৃষ্টিতে তাইতো মনে হয়। অন্তত আপেক্ষিকভাবে হলেও সঠিক, যুগ জমানা তো তাই বলে। এ অভ্যাসে ভর করে যারা খায় আর যারা খাওয়ায় উভয়ে স্বমহিমায় আত্মতুষ্টিতে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে নগদ সুবিধা না থাকলে হোস্ট খুব একটা মজায় থাকে না। সর্বসাধারণ অবশ্য এটাকে ব্যাভিচারের মতই দেখে। নিজ হতে শুরু হয়ে পরিবার ছাপিয়ে চৌদ্দগুষ্টি পর্যন্ত ফ্রি খাওয়ার যে অভ্যাস তাতে ভাটা পড়লে সমস্যা। ভদ্রতা, জ্যেষ্ঠতা, সিনিয়রিটি, গুণীর মর্যাদা, সর্বোপরি প্রটোকল বুঝে না বলে অপবাদ শুনতে হয়, ঠ্যালাও সামলাতে হয়। অপবাদ না হয় নেয়া যায়, সে কলঙ্ক নিয়ে আশ্রয়ও পাওয়া যায়, যুগ তো আর অত খারাপ হয়নি কিন্তু ঠ্যালার ক্ষেত্রে পা রাখার স্পেস তো দুরের কথা কূল কিনারাও খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষমেশ জিহাদী চিন্তা ছাড়তেই হয়। হয় নাকি?
নতুন ক্ষমতা পেতে শুরু করেছে কিংবা চাকুরিতে জয়েন করেছে। নাম সম্বোধনের পরিবর্তে বড় ভাই, স্যার, মাননীয় স্যার, সন্মানিত মহোদয় উচ্চারিত হচ্ছে। প্রতি শ্রবণে কানের দুপাশের রগ দিয়ে ফুরফুরে একটা অনুভূতি মাথায় গিয়ে নৃত্য করে। আহ! কি মজা। যেন ভয়ংকর কোন ড্রাগের মোহনীয় আবেশ। রিক্সাওয়ালা ভাই বললে, অন্য কেউ স্যার না বললে, বক্তব্যে বিশেষণহীন স্যার ডাক শুনলে মাথার মধ্যে যেন লাফিয়ে ওঠে মেজাজ। ঠিক অভ্যাসগ্রস্ত সময়মত ড্রাগ না পেলে যেমন করে। ব্যাটা, ব্যবহার জানে না। অনেকে মুখে না বললেও মনের মধ্যে দাঁত পিষতে থাকে। পাশের রাস্তার ফুটপাতের দুই টাকার আখের রস বিক্রেতা কিনা বলে, ভাই কেমন আছেন। সালাম কালাম কিছু নেই। মাথায় রক্ত চড়ে বসে। অস্ফুটে মুখ দিয়ে বের হয়, ব্যাটা তোর কি মায়ের পেটের ভাই আমি? দোষ ভদ্র লোকগুলোর না, অভদ্র অভ্যাসের। মান সম্মান কি এতই ঠুনকো, সম্বোধনের চোটে হারিয়ে যাবে, নাকি তথাকথিত চেইন অফ কমান্ড দপ্তরের দরজা মাড়িয়ে অলিতে গলিতে ফেরি করতে হবে?
বড় অফিস কিংবা বড় বাড়ি। সবাই স্যার বলতে বলতে ফেনা তোলে। আর যারা বড় ভাই বলে তাদের বিনয় মহোদয় সম্বোধনের তুলনায় কোন অংশে কম নয়।
আমার এক বন্ধু বলছিলেন, সে তার এক কর্তাকে ফোন দিয়েছিলেন কোন একটা ইনফরমেশন শেয়ার করার জন্য। কর্তা ফোন রাখার প্রাক্কালে আমার সে বন্ধুকে প্রায় ধমক দিয়ে বলেছিলেন, আপনি তো কথা বলাই জানেন না। আমার ফ্রেন্ড তো আবাক! পাশে বসা তাঁর কলিগকে বলেছিলেন, আরে! বুঝলাম না তো কিছু। সব শুনে সেই কলিগ নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, কতবার স্যার বলেছেন?
একবার এক করিৎকর্মা ওয়ার্কারের কথা শুনেছিলেন। একটা অফিসে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন। ভদ্রলোক কাজ করেন চমৎকার। মজুরির টাকাটা উসুল করে দিয়েই খান্ত হয়। কিন্তু জগতের শিক্ষা আর তথাকথিত কাস্টমস সম্পর্কে কমই জানতেন তিনি। একদিন অন্য অফিসের খুবই সেনসেটিভ স্যার খুবই রেগে-মেগে অভিযোগ দিয়ে বসলেন। সেই ওয়ার্কার নাকি ব্যবহার জানে না, স্যার টার কিছু বলে না। কিছু বললে, কথাই শুরু করেন ‘জ্বি বলেন’ দিয়ে। কত বড় অস্পর্ধা! তাইতো! কত বড় স্পর্ধা!
হয়রত বায়েজিদ বোস্তামী (র) এর গল্প আমরা সবাই জানি হয়তো, মায়ের জন্য সারারাত পানি নিয়ে তাঁর শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কখন মায়ের ঘুম ভাঙ্গবে সে আশায়। ভক্তি আর ভালোবাসার অনুকরণীয় উদাহরণ হিসাবে ঘটনাটি বলা হয়, পড়ানো হয়।
চারপাশে ভয়ে ভক্তি, ভক্তিতে নতশীর কম দেখা যায় না। কিন্তু! সাধারণ জনগণ দেখেন, ভুক্তভোগী টের পান, আর সুবিধাবাদীগণ জেলে যে তৃপ্তিতে মাছ ভর্তি জাল টানেন, সেই আনন্দেই চালিয়ে যান……………………

shisir mehdi

মো: মেহেদী হাসান। জন্ম করতোয়া ‍পাড়ের পুন্ড্রবর্ধনের স্মৃতিমাখা বগুড়ায়। সরকারী আজিজুল হক কলেজ হতে রসায়নে স্নাতকোত্তর। খন্ডকালীন এমফিল করছেন রুয়েটে। বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরির মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। বর্তমানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত। শিশির মেহ্দী ছদ্মনামে লেখালেখির শুরু করেছিলেন। প্রকাশিত বই চক্র ( ছোট গল্প) এবং নির্বাসনে আছি (কবিতা)। পানি নিয়ে একটা গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। লেখালেখি, ভ্রমণ ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

Leave a Reply