Skip to main content

মাঝে মধ্যেই প্রবলভাবে পাহাড় ডাকে। কেন? খুব করে কারো অভিজ্ঞতায় বা লেখায় পাইনি। সরকারি চাকরির সুবাদে রেফারেন্সটা ভালো ভাবেই আত্মস্থ করতে শিখেছি। তাই বিভিন্ন জায়গায় নিজ সক্ষমতার সাপেক্ষে খুঁজেও যখন উত্তর পেলাম না, দেবতাখুমে এক পাথরের উপর বসে পাহাড়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবতে বসলাম, কারনটা। সাহস পেলাম, অন্ততঃ এখানে বলার সুযোগ নেই, তুমি বেশি বোঝ? কোন বিধিতে পেয়েছো এইটা!…

প্রাত্যহিক দৃশ্য বা সিস্টেম বা কাজের পৌনঃপুনিকতায় যে একঘেয়েমি বা হাঁপিয়ে উঠা, পাহাড় তা হতে শিথিল করে এক নতুনত্বের দৃষ্টি প্রসারিত সৌন্দর্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। গতানুগতিক Reactive চিন্তা হতে মুক্তি পেয়ে দিগন্তের বিশালতায় বন্ধন মুক্তির আহ্লাদে নেচে উঠে মন। অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে, উফ! কী অসম্ভব সুন্দর!

কিন্তু কাপ্তাই লেকে নৌকার খোলা ছাদে জলের গন্ধ মাখা বাতাসে বসে পাহাড়ের গায়ে অস্তায়মান সূর্যের আলোর খেলা দেখতে দেখতে মনে হলো, আহা বলে নেচে উঠার জন্য যে কোন কিছুই কারন হতে পারে। তা নির্ভর করে কারো Interest, মানসিক/ শারীরিক অবস্থা এবং সৌন্দর্যের আপেক্ষিক তীব্রতার উপর।
একসময় নদী পাহাড়ের মতই গভীরভাবে ডাকতো! কত পুলকিত সময় পার হয়েছে যমুনায়। নদীর গভীরে নির্জন চরে পানির মৃদু আছড়ে পড়া, নিভৃতে বাতাসের নাচানাচি,দূরে জলের শরীর ঘেঁষে শেষ বিকেলের সূর্যের আভা, পানকৌড়ির ডুব সাঁতার অনুভূতিতে আজো তীব্র ভালো লাগায় অলংকৃত হয়ে আছে।

ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির গোল্ডেন আওয়ার হিসেবে বিবেচিত সময়ই, সূর্যাস্তের আগে ও সূর্যোদয়ের পরে, পাহাড় দর্শনের মোক্ষম সময়। দীর্ঘক্ষণ ট্রেকিং করার পরেও ধ্যানমগ্ন পাহাড়ে মন হারিয়ে যায়, অসংজ্ঞায়িত মায়ায় ভালোলাগার মৃদু ছন্দে নেচে উঠে মন। সম্মোহনী আলোয় নিমগ্ন হয়ে যেতে হয়। ক্রমশ তিরোহিত বা প্রস্ফুটিত প্রকৃতির শব্দ আর আলো উপস্থিতি সুখের মতন ধীর লয়ের তন্দ্রায় বা জাগরণে আমাদের বিমোহিত করে রাখে। এক অপার্থিব আলোয় বিস্তৃত পাহাড়শ্রেণী, নিজের ক্ষুদ্র সত্তা আর সবুজের রিদম মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। নিজকে হারিয়েও খুঁজে পাওয়ার আনাবিল আনন্দ যেন বিরাজ করে সর্বত্রই!

(প্রথম প্রকাশ: shisirmehdi.home.blog এ ১৪/১০/২০২২)

shisir mehdi

মো: মেহেদী হাসান। জন্ম করতোয়া ‍পাড়ের পুন্ড্রবর্ধনের স্মৃতিমাখা বগুড়ায়। সরকারী আজিজুল হক কলেজ হতে রসায়নে স্নাতকোত্তর। খন্ডকালীন এমফিল করছেন রুয়েটে। বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রভাষক পদে চাকুরির মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। বর্তমানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কর্মরত। শিশির মেহ্দী ছদ্মনামে লেখালেখির শুরু করেছিলেন। প্রকাশিত বই চক্র ( ছোট গল্প) এবং নির্বাসনে আছি (কবিতা)। পানি নিয়ে একটা গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। লেখালেখি, ভ্রমণ ও ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

2 Comments

  • ফোরকান আহসান says:

    স্যার, আপনার “কোন সে আলোয়” শীর্ষক লিখাটা পড়লাম। মন ভরিয়ে দেওয়া কী সুন্দর শব্দমালা! আবারো পাহাড়ে যাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠলো। আপনার এই লিখায় আমি ক্ষণিকের জন্য পাহাড়ের স্নিগ্ধতা, বিশালতা ও সৌন্দর্যে ডুবে গিয়েছিলাম। আবারো যাবো পাহাড়ে। এবার হয়তো পাহাড়কে আগের চেয়ে ব্যাতিক্রম দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাব। অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে পাহাড় আমার চিত্তে অফুরান মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেবে।

  • sumi says:

    মাঝে মাঝে কাজের ফাকে এভাবে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে ভালোই লাগে, সাথে আল্লাহর নিখুঁত সৃষ্টি কে উপলব্ধি করা যায়।

Leave a Reply to sumi Cancel Reply